হাসির ছোট গল্প – উল্টো ব্যবস্থা
কৃষিপ্রধান বাংলায় কৃষকেরা সারাদিন ক্ষেতেখামারে কাজ করে। তাই তাদের দুপুরের খাবার ওই ক্ষেতে বসেই খেতে হয়। কৃষকের স্ত্রী, কন্যা এবং কচিত কখনো শিশুপুত্র পিতার খাবার নিয়ে মাঠে আসে। ক্ষেতের আলে বসে বা কোনো গাছের ছায়ায় বসে কৃষক খাবারটা খেয়ে নেয়। পরে থালাবাসন, পানির জগ, গেলাস নিয়ে ঘরে ফেরে খাবার বহনকারী মানুষটি।
একবার এই রকম এক হিন্দু কৃষকের জন্য খাবার নিয়ে গেছে তার স্ত্রী। কৃষক যে ক্ষেতে কাজ করছিল সে ক্ষেতের পাশেই একটা হিজল গাছ। হিজল গাছের ছায়ায় বসে কৃষক খাবার আয়োজন করেছে এমন সময় একটা শালিক পাখি কৃষকের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে এসে হিজল গাছে বসে। শুধু কি তাই? গাছে বসবার আগে ওপর থেকে যে পায়খানা করে দেয় তা পড়ে কৃষকের খাবারের থালার মধ্যিখানে। তো, এখন কি করা! কৃষাণী বলে, ‘এক কাজ কর। ধর্মগুরু আছে কিনা কাছেপিঠে দেখ। তার মত লও। দেখ, সে যা বলে তাই কর।
ক্ষুধার্ত কৃষক, পেটে রাক্ষুসে ক্ষিধে নিয়ে ধর্মীয় বিধানের আশায় যায় পাশের গায়ে। কিন্তু না, তার নিজ ধর্মের কোনো গুরু নেই সে গাঁয়ে। তবে অন্য ধর্মের আছে। সে-ধর্মের সঙ্গে কৃষকের নিজ ধর্মের খুব বিরোধ। এই দুই ধর্মের লোক একজন উত্তরে গেলে, অন্যজন যায় দক্ষিণে। এক ধর্মের মানুষ যা করে অন্য ধর্মের মানুষ করে তার উল্টোটা। তবু কৃষক অন্য ধর্মের গুরুকেই তার সমস্যার কথা বলে সমাধান জানতে চায়। কারণ, তখন কৃষকের ক্ষিধা হিতাহিত জানশূন্য করে দেবার মতো। নিজ ধর্মগুরু খোজার জন্য আরো দূরে যাবার ধৈর্য তার নাই।
অন্য ধর্মের গুরু বলেন, আমাদের ধর্মীয় বিধানে যা আছে সেটা হল, যেখানে পায়খানা করেছে সেখানটাসহ আশপাশের কিছুটা খাবার ফেলে দিয়ে বাকিটা খেয়ে নিতে পারি। ক্ষুধার্ত কৃষক ফিরে আসে। বিরক্ত হয়ে বউকে বলে আমাদের ধর্মের কোন বীর বাহাদুরকে পাই নাই। হ্যাগো একজনারে পাইছি, তার মতও আনছি। সোজা হিসাব। উল্টা ব্যবস্থা করলেই হইব্যানে। কৃষক দ্রুত চার পাশের সব ভাত ফেলে দিয়ে পাখির কুকাণ্ড করা অংশ ও তার আশপাশের কিছু অংশেরটা খেয়ে নেয়।
(সমাপ্ত)