গল্পঃ ঠেলাঠেলির ঘর
একজনের দুই বউ। কথায় বলে, ‘ঠেলাঠেলির ঘর, খোদায় রক্ষা কর।’ দুই বউকে লইয়া স্বামী বেচারির বড়ই মুশকিল। তারা একে অপরের দোষ ধরিবার জন্য সব সময় সতর্ক হইয়া থাকে। এক বউকে কোনো কাজ দিলে সে অপর বউয়ের ঘাড়ে চাপাইতে চায়।
স্বামী গিয়াছে হাল বাহিতে মাঠে। দুই বউ ঠেলাঠেলি করিয়া রান্না করে নাই। দুপুরবেলা বাড়ি এসে স্বামী ভাত পায় না। বাড়ির ধারে বেগুনখেতে পানি দেওয়ার কথা। এক বউ বলে, তুমি পানি দাও, আরেক বউ বলে, তুমি পানি দাও। মাঝখান দিয়া বেগুনখেতে পানি না দেওয়াতে এক দিনের রোদেই চারাগাছগুলি শুকাইয়া যায়।
অনেক ভাবিয়া–চিন্তিয়া স্বামী বউদের যার যার কাজ ভাগ করিয়া দিল, আর এক দিন অন্তর এক-একজনকে রান্না করিতে বলিল।
আজ বড় বউয়ের রান্নার পালা। ছোট তাকে তাকে আছে। যেই বড় বউ একটু ওদিকে গিয়াছে, অমনি ছোট বউ আসিয়া তরকারির হাঁড়িতে অনেকখানি নুন ঢালিয়া দিয়া গেল। খাইবার সময় নুনের জন্য কেহই খাইতে পারিল না। বড় বউয়ের বদনাম হইল। কিন্তু সে বুঝিতে পারিল ইহা কাহার কাজ।
পরদিন ছোট বউয়ের রান্নার পালা। কাল বড় বউয়ের রান্নার বদনাম হইয়াছে। আজ ছোট বউ এমন রান্না করিবে যে বাড়ির লোক খাইয়া ধন্য ধন্য করিবে। কত সুন্দর করিয়া বাটনা বাটিয়া, এটা-ওটা মসলা দিয়া ছোট বউ অতি পরিপাটি করিয়া রান্না করিতেছে। যেই ছোট বউ একটু ওদিকে গিয়াছে, অমনি বড় বউ এসে তরকারির মধ্যে অনেকখানি মরিচের গুঁড়া ফেলিয়া দিয়া গেল। ঝালের জন্য সেদিন কেহই খাইতে পারিল না। বাড়ির সকলে ছোট বউয়ের রান্না লইয়া ছিঃ ছিঃ করিতে লাগিল।
এমনি আজ তরকারিতে ঝাল বেশি, কাল নুন বেশি, পরশু হলুদ বেশি। স্বামী বেচারা বড়ই মুশকিলে পড়িল, কিছুতেই ধরিতে পারে না কে এমন কাজ করে।
সেদিন রান্না করিয়াছিল ছোট বউ। তরকারিতে এত নুন হইয়াছে যে মুখেও দেওয়া যায় না। কিন্তু স্বামী একটু চালাকি করিল। সে খাইতে খাইতে বলিল, ‘আজ যে তরকারিতে মোটেই নুন পড়ে নাই; এমন নুন ছাড়া তরকারি কি খাওয়া যায়?’
তখন বড় বউ বলিল, ‘ও তো একেবারেই নুন দিয়াছিল না, আমি আড়ালে থাকিয়া সামান্য একটু ফেলিয়া দিয়াছিলাম। তাই খাইতে পারিলে। নইলে আজ তোমার খাওয়াই হইত না।’ তখন স্বামী বড় বউয়ের চুলের মুঠি ধরিয়া মারিল এক কিল, ‘তবে রে শয়তানী! তুই লুকাইয়া তরকারিতে নুন দিয়াছিলি?’
তারপর ছোট বউকেও ধমকাইয়া বলিল, ‘আমি সমস্তই বুঝিতে পারিয়াছি। তোরা একজন অপর জনের ঘাড়ে দোষ চাপাইতে একে অপরের তারকারিতে নুন ফেলিয়া দিস, ঝাল ফেলিয়া দিস। এরপর যদি কাহারও রান্নায় নুন-ঝাল বেশি হয়, তবে দুইজনেরই চুলে মুঠি ধরিয়া এইভাবে মারিব।’
সেই দিন হইতে দুই বউ ভালোমতো রান্নাবান্না করিতে লাগল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো