ভুতের গল্প – রাতের গা ছমছমে আওয়াজ
শুরু
রাত তখন প্রায় বারোটা। গ্রামের মাঝখানে ছোট্ট পুকুরের ধারে বসে আছে রনি। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উজ্জ্বলভাবে আলো ছড়াচ্ছে। পুকুরের জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব এমনভাবে লুকোচুরি খেলছে, যেন পুকুরটা কোনো গোপন কথা জানে। কিন্তু রনির চোখে-মুখে অস্বস্তি। আজ রাতে ও এখানে কেন? এমন জায়গায় একা আসার সাহস ওর আগে কখনো হয়নি।
সবকিছুর পেছনে কারণ আছে। রনি আজ দুপুরে গ্রামের বয়স্ক মানুষদের গল্প শুনেছিল। ওরা বলছিল, এই পুকুরের ধারে রাতে অদ্ভুত সব আওয়াজ শোনা যায়। অনেকেই বলেছে, গভীর রাতে কেউ যেন ডেকে নিয়ে যায়। যে যায়, সে আর ফিরে আসে না। কিন্তু রনি এসব ভূতের গল্পে কখনো বিশ্বাস করেনি। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আজ রাতেই প্রমাণ করবে সব বাজে কথা।
অদ্ভুত ঘটনা
রাতের নিস্তব্ধতা যেন আরো গভীর হয়ে আসছে। হঠাৎ কোথাও যেন একটা পাতা মচমচ করে উঠল। রনি চমকে উঠল। সে ভালো করে চারপাশে তাকাল, কিছুই দেখতে পেল না। কিন্তু একটু পরেই গায়ের রোম খাড়া হয়ে গেল, কারণ পুকুরের পানিতে একটা ঢেউ উঠল। কোথা থেকে ঢেউ এল? পানিতে তো কিছু পড়েনি।
“কে আছো?” রনি ডাক দিল, কিন্তু কোনো উত্তর পেল না। তার গলার স্বর নিজেকেই কেমন ভীতু মনে হলো।
অবস্থা খারাপ হতে শুরু করল। পুকুরের ধারে থাকা গাছগুলো হালকা বাতাসে দুলছিল, কিন্তু গাছের পাতার শব্দের সঙ্গে ভেসে আসছিল চাপা গোঙানির মতো একটা আওয়াজ। রনি বুঝতে পারল না, এটা কিসের আওয়াজ। ভয়ে ওর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল।
দেখা মিলল
হঠাৎই পুকুরের ধারে একটা সাদা ছায়ামূর্তি দেখা গেল। রনি কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে গেল। ওর মনে হলো, ওর শরীরটা যেন জমে গেছে। ছায়ামূর্তিটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।
“তুই এখানে কেন এসেছিস?” মৃদু অথচ গা শিউরে ওঠা কণ্ঠস্বর শোনা গেল। রনি কিছু বলতে পারল না। কণ্ঠস্বরটা যেন সরাসরি ওর মনের গভীরে আঘাত করল।
মূর্তিটা একটা মেয়ে। তার চোখ দুটো গভীর কালো গর্তের মতো, আর মুখে একধরনের শূন্যতার হাসি। তার পরনে সাদা শাড়ি, যা বাতাসে দুলছে। রনি বাধ্য হয়ে প্রশ্ন করল, “তুমি কে?”
মেয়েটি উত্তর দিল না, শুধু হাত বাড়িয়ে ওর দিকে ইশারা করল। যেন রনিকে কোথাও নিয়ে যেতে চায়।
পুরনো রহস্য
রনির মনে হঠাৎ করেই গ্রামের পুরনো গল্পগুলো ঘুরে এল। বহু বছর আগে এই পুকুরে একটা মেয়ে ডুবে মারা গিয়েছিল। অনেকে বলে, তার প্রেমিক তাকে ঠকিয়েছিল। সে প্রতিশোধ নিতে নিজের জীবন দিয়েছিল। সেই থেকেই পুকুরের ধারে এভাবে তাকে নাকি দেখা যায়।
রনি কিছু বলার আগেই মেয়েটি পুকুরের দিকে হাঁটা শুরু করল। রনি যেন সম্মোহিত হয়ে ওর পেছনে হাঁটতে লাগল। পুকুরের জলে পা দিয়ে মেয়েটি পানির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। কিন্তু তার হাতের ইশারা যেন বলছে, রনিকেও পুকুরে নামতে।
ভয়ঙ্কর মুহূর্ত
রনি নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করল। কিন্তু তার পা দুটো যেন ওর কথা শুনছে না। ধীরে ধীরে ও পুকুরে নামতে শুরু করল। হঠাৎই পেছন থেকে কেউ চিৎকার করে উঠল, “রনি! থাম!” সে চমকে ফিরে তাকাল। গ্রামের মুরুব্বি করিম চাচা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।
করিম চাচা ছুটে এসে রনিকে টেনে তুললেন। “তুই এখানে কেন এসেছিস? জানিস না এটা অভিশপ্ত জায়গা!”
রনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে করিম চাচার কাছে সব বলল। চাচা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “তুই ভালো করেই বাঁচলি। এই মেয়েটা সবাইকে পুকুরে টেনে নিয়ে যায়। কেউ আর ফেরে না। চল, এখান থেকে দ্রুত পালাই।”
শেষ
রনি আর করিম চাচা দ্রুত পুকুরের ধারে থেকে দূরে সরে গেল। রনির মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, কেন সে এমনটা করল? কিন্তু এই প্রশ্নের কোনো উত্তর সে পায়নি। পুকুরের দিকে শেষবারের মতো তাকাতেই মনে হলো, মেয়েটা দূর থেকে দাঁড়িয়ে হাসছে।
সেদিন থেকে রনি বুঝতে পেরেছিল, সব গল্প গুজব নয়। কিছু সত্যিই আছে, যা মানবসমাজের বাইরে।