Wednesday, March 12, 2025
Homeইসলামিক গল্পসর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী বান্দার ঘটনা

সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী বান্দার ঘটনা

সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী বান্দার ঘটনা

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার অবস্থা এরূপ হবে যে, বদ আমলের কারণে প্রথমে তার ঠিকানা হবে জাহান্নামে।

যদিও সে মুমিন হোক না কেন? কারণ, মুমিন বান্দাকেও তার বদ আমলের কারণে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ জন্য সে প্রথমে জাহান্নামে যাবে। জাহান্নামে দগ্ধ হওয়া অবস্থায় সে আল্লাহর কাছে আরজ করবে, হে আল্লাহ! জাহান্নামের অগ্নিশিখা ও তার উত্তাপ আমাকে পুড়ে ফেলেছে। আমার প্রতি অনেক দয়া হবে যদি আপনি আমাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও জাহান্নাম থেকে সরিয়ে পাড়ে বসিয়ে দেন, যেন অল্প সময়ের জন্য হলেও জাহান্নামের আগুনের দহন থেকে বাঁচতে পারি।

আল্লাহতায়ালা তাকে বলবেন, যদি আমি তোমাকে সেখানে বসিয়ে দিই, এরপর আরও কিছু দাবি করবে না তো? লোকটি বলবে, হে আল্লাহ! আমি ওয়াদা করছি, শুধু একবার আমাকে বের করে সেখানে বসিয়ে দিন। এরপর আমি আপনার কাছে কোনো কিছু দাবি করব না। আল্লাহতায়ালা তাকে বলবেন, আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কথা মেনে নিচ্ছি। তারপর ওই ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে জাহান্নামের পাড়ে বসিয়ে দেওয়া হবে।

জাহান্নামের পাড়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তার চিন্তাশক্তিতে আরও কিছু পাওয়ার আশা সৃষ্টি হবে। ফলে সে আবার বলবে, হে আল্লাহ! জাহান্নামের আগুন থেকে আপনিই তো মুক্তি দিয়েছেন, এটা আপনার দয়া ও করুণা। কিন্তু বসিয়েছেন এমন স্থানে যেখানে জাহান্নামের আগুনের শিখা পুরোপুরিভাবে দহন করছে। যদি আমাকে সামান্য সময়ের জন্য এমন স্থানে নিয়ে যেতেন যেখানে জাহান্নামের উত্তাপ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। আল্লাহতায়ালা তাকে বলবেন, তুমি তো সবেমাত্র অঙ্গীকার করেছ যে, আর কিছু চাইবে না। আর এখন সে ওয়াদার খেলাফ করছ?

বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! বেশি নয় আমাকে এখান থেকে একটু দূরে নিয়ে যান। এরপর আর কিছু বলব না এবং কিছু চাইব না।

সুতরাং আল্লাহতায়ালা তার আবেদন কবুল করে তাকে সামান্য দূরে সরিয়ে দেবেন যেখান থেকে জান্নাতের হৃদয়কাড়া, মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলি সে অবলোকন করবে। কিছুক্ষণ পর সে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আপনার দয়া ও অনুগ্রহের দ্বারা আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং এমন স্থানে বসিয়েছেন যেখান থেকে জান্নাতের দৃশ্যাবলি স্পষ্ট দেখা যায়। আপনি আমাকে আরেকটু অনুমতি দেন, যেন জান্নাতের দরজার কাছাকাছি যেতে পারি এবং একটু জান্নাত দেখতে পারি। আল্লাহতায়ালা বলবেন, হে বান্দা!

তুমি আবারও ওয়াদা খেলাফ করছ? লোকটি বলবে, হে আল্লাহ! যখন আপনি আপনার অনুগ্রহে আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন এখন জান্নাতটাও এক নজর দেখতে দিন।

আল্লাহতায়ালা বলবেন, তোমাকে এক নজর দেখতে দিলে তো বলবে, আমাকে একটু ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিন। লোকটি বলবে, হে আল্লাহ! শুধু এক ঝলক দেখতে দিন। এরপর আর কিছু চাইব না। তারপর আল্লাহতায়ালা তাকে এক নজর জান্নাত দেখার সুযোগ দেবেন। কিন্তু জান্নাতকে এক ঝলক দেখার সঙ্গে সঙ্গে সে বলে উঠবে, হে আল্লাহ! আপনি তো পরম দয়ালু ও অনুগ্রহকারী।

আপনি যখন আমাকে এত দয়া করেছেন এবার আরেকটু দয়া করুন।

মেহেরবাণী করে এর ভিতরেও প্রবেশ করিয়ে দিন। তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, দেখ প্রথমেই তোমাকে বলেছিলাম, তুমি ওয়াদা ভঙ্গ করবে। কিন্তু যখন আমার অনুগ্রহে তোমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি তখন তোমাকে তার ভিতরেও প্রবেশ করাব। সেখানেও তোমাকে পুরো পৃথিবীর সমান এলাকা দান করব। লোকটি বলবে, হে আল্লাহ! আপনি তো দয়ার সাগর। আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন? সে আরও বলবে, জান্নাতে এত বড় স্থান কোথায়? আর আমার মতো নগণ্য গোলাম এত বিশাল জান্নাতের অধিকারী হব কেমন করে? আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমি কারও সঙ্গে ঠাট্টা করি না। বাস্তবেই আমি তোমাকে এমন জান্নাত দান করলাম।

হাদিস শরিফে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদিসটি বলার সময় হেসেছিলেন। এরপর যেসব সাহাবি হাদিসটি শুনেছেন, তারাও তাদের শাগরেদদের কাছে এ হাদিসটি বর্ণনার সময় হেসে বর্ণনা করতেন। তারপর তারাও তাদের ছাত্রদের কাছে বর্ণনা করার সময় হেসে হাদিসটি বর্ণনা করতেন। এমনিভাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুহাদ্দিসগণ যখনই হাদিসটি বর্ণনা করেন তখন হাসেন, আর যারা শোনেন তারাও হাসেন। এ কারণে এ হাদিসটিকে ‘হাদিসে মুসালসাল বিজজি হক’ বলা হয়। অর্থাৎ হাসিসহ ধারাবাহিক বর্ণিত হাদিস।

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments