শিক্ষামূলক গল্প – কলম ও তলোয়ার
মোগল বাদশাহ শাহজাহানের একটি দপ্তর ছিল, সেখানে সৈনিকদের মাইনে দেয়া হতো। যে লোকটি মাইনে দিতো তাকে বলা হতো মুন্সি। সেদিন মুন্সি দপ্তরের কাজে খুব ব্যস্ত ছিল। এমন সময় ঝড়ের মতো এসে হাজির হলো একজন সৈনিক। কি একটা কারণে মাইনে নিতে তার দেরী হয়ে গিয়েছিল।
সৈনিকটি ভেতরে ঢুকেই চড়া কণ্ঠে বললোঃ আমার মাইনেটা চুকিয়ে দাওতো।।
মুন্সি বললঃ আমার হাতের কাজটা সেরেই তোমার মাইনে দিচ্ছি।
সৈনিক এবারে আরো রেগে বললাঃ জলদি করো। আমার বসার সময় নেই।
মুন্সি তখন হিসাব মিলাচ্ছিল। অন্য কাজে মন দেবার একদম সুযোগ ছিলনা তার।
সে বললোঃ একটু বসতেই হবে তোমাকে। হাতের কাজটা শেষ না করে আমি মাইনে দিতে পারবোনা।
মিলিটারী মেজাজে সৈনিক এবারে বললোঃ কি বললে? আমার মাইনে দেবে না? আমার মাইনে আটকে রাখবে?
মুন্সি বললোঃ মাইনে দেবোনা এমন কথাতো বলিনি। বলেছি একটু বসতে হবে।
সৈনিক তার তলোয়ারটি বাড়িয়ে ধরে বললোঃ এখুনি আমার মাইনে দাও। তা না হলে তোমার সামনের দু’টি দাঁত তুলে ফেলবো।
মুন্সি কলম ওপরে তুলে ধরে বললাঃ কি বললে? আমার দাত খুলে ফেলবে? আমার হাতেও কলম আছে। ভেবোনা আমি দুর্বল। আমিও কলম দিয়ে কিছু করতে পারি।
সৈনিক মুন্সির কথায় গ্রাহ্য না করে বললোঃ কলম দিয়ে করবে কচু। দাও, এখন আমার মাইনেটা দিয়ে দাও। মাইনে চুকিয়ে দিলো মুন্সি।
সৈনিক চলে যেতে যেতে বললোঃ আমাকে ভয় দেখিওনা বাপু। তোমার কলমের চেয়ে আমার তলোয়ার অনেক বড়।
মুন্সি সৈনিকের আচরণে মনে বড় ব্যথা পেলো। মনে মনে বুদ্ধি আটলো, কেমন করে সৈনিককে শায়েস্তা করা যায়। হঠাৎ একটা বিষয় তার মনে পড়লো। তখনকার দিনে সৈনিকদের বেতন নিতে হলে শরীরের একটি চিহ্ন দেখাতে হতো। আগেই চিহ্নটির কথা বেতনের খাতায় লেখা থাকতো। মুন্সির মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো। সে মাইনের খাতায় শরীরের চিহ্নের ঘরে লিখে রাখলো, সৈনিকটির সামনের দুটি দাঁত নেই। এক মাস পরের কথা। মুন্সি বেতনের টেবিল থেকে সরে গিয়ে অন্য জায়গায় বসলো। বেতনের টেবিলে বসলে অন্য একজন লোক। সেই সৈন্যটি এলো মাইনে নিতে। বেতনের কর্মচারী খাতা খুলে সৈনিককে জিজ্ঞেস করলোঃ কি নাম আপনার?
সৈন্য নাম বললো।
কর্মচারী জিজ্ঞেস করলোঃ আপনার বাবার নাম কি?
সৈন্য তার বাপের নাম বললো।
কর্মচারী বললোঃ দেখি, আপনার দাঁতের পাটি দেখান তো!
সৈন্য বললোঃ কেন?
কর্মচারী বললঃ খাতায় লেখা আছে আপনার সামনের দু’টি দাঁত নেই।
সৈন্য বললোঃ নাতো! আমার চিহ্নতো এই কাটা আঙ্গুলটা।
কর্মচারী বললোঃ না, খাতায় যা লেখা আছে, তাই মানতে হবে। না হলে আপনি মাইনে পাবেন না।
সেন্যটি আর রাগ করতে পারলো না। মাইনে না তুললেও চলেনা। সে দেরী না করে হেকিমের কাছে চলে গেলো। হেকিম তার সামনের দুটি দাঁত তুলে ফেললো। সৈন্যটি রক্তমাখা মুখে রুমাল চেপে ধরে আবার হাজির হলো দপ্তরে।। মাইনে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় সে দেখতে পেলো দপ্তরের মুন্সিকে। মুচকি হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। সৈন্যটি মুন্সিকে বললোঃ সত্যি, কলমের জোরই বেশী। আমি আর কোন দিন তলোয়ারের বাহাদুরী দেখিয়ে বেয়াদবী করবোনা। সালাম মুন্সি।
গল্পের শিক্ষা: মুন্সি প্রতিশোধ নিতে তলোয়ার ব্যবহার করেনি, বরং বুদ্ধি দিয়ে সৈনিককে তার ভুলের শিক্ষা দিয়েছে। বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকেও পরাজিত করা যায়। ক্ষমতার অহংকার ও উদ্ধত আচরণ একদিন বিপদ ডেকে আনে। ক্ষমতা থাকলেও বিনয়ী হওয়া উচিত, কারণ দুর্ব্যবহার লজ্জা ও অনুশোচনা বয়ে আনে।