Tuesday, March 11, 2025
Homeগল্প কথাগরু - গাধা ও কৃষকের গল্প

গরু – গাধা ও কৃষকের গল্প

গরু – গাধা ও কৃষকের গল্প

এক কৃষকের ছিল একটি গাধা ও একটি গরু। কৃষক বোঝা আনা-নেয়া ও চলাচলের বাহন হিসেবে গাধাকে ব্যবহার করত আর গরু দিয়ে হালচাষ করত। গম ও ধান মাড়াইয়ের কাজেও গরুকে ব্যবহার করা হতো। একদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একনাগাড়ে কাজ করে গরু যখন ঘরে ফিরল তখন অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে ক্লান্ত হয়ে একা একাই বিড়বিড় করে কী যেন বলছিল। গরুকে বিড়বিড় করতে দেখে গাধা বলল :

গাধা : “আরে বাবা, হয়েছে কী? বিড়বিড় করে কি বলছ”?

গরু : “তোরা গাধার দল আমাদের দুঃখ-কষ্টের কি বুঝবি? আমাদের দুঃখ-কষ্ট কেউ বুঝে না রে, কেউ বুঝে না।”

গাধা : “বুঝব না কেন, অবশ্যই বুঝব। তাছাড়া তুই যেমন বোঝা টানিস আমরাও তেমনি বোঝা টানি। আমাদের মধ্যে তফাৎটা কোথায় দেখলি”!

গরু : “তফাৎ অবশ্যই আছে। গাধাকে বোঝা টানা ছাড়া আর কোনো কাজে ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু জমি চাষ করা, ফসল মাড়াই করা, কলুর ঘানি টানা- এসব কষ্টের কাজ আমাদের করতে হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর ব্যথা-বেদনায় সারারাত চোখে ঘুম আসে না। তোদের কি এত কষ্ট করতে হয়?”

গরুর কষ্টের কথা শুনে গাধার মনটা খারাপ হয়ে গেল। গরুকে কষ্ট থেকে রেহাই দেয়ার জন্য সে একটা বুদ্ধি বের করল। এরপর গরুকে উদ্দেশ্য করে বলল :

গাধা : “তুই যদি চাস তাহলে আমি এমন একটা বুদ্ধি দিতে পারি যাতে তোকে আর মাঠে যেতে হবে না।”

গরু : “গাধার মাথায় আবার বুদ্ধি আছে নাকি ? না না তোর বুদ্ধি অনুযায়ী চলতে গেলে আমার বিপদ আরো বাড়বে।”

গাধা : “শোন্ ! মানুষ আমাদেরকে যত গাধা মনে করে আমরা কিন্তু আসলে তত গাধা নই। আর এ জন্যইতো আমাদেরকে হালচাষ ও ঘানি টানার কাছে কেউ লাগাতে পারে না। তুই একবার আমার কথা অনুযায়ী কাজ কর্, তাহলে দেখবি তুইও আমার মতো সুখে আছিস।”

গরু : “ঠিকাছে বল্‌ দেখি, তোর বুদ্ধিটা কী”?

এরপর গাধা গরুকে অসুস্থ হবার ভান করতে পরামর্শ দিল। গরু নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাধার পরামর্শ অনুযায়ী হাত-পা সোজা করে ঘরে শুয়ে রইল এবং হাম্বা হাম্বা রবে ‘উহ্‌ আহ্‌’ করতে লাগল। কৃষক এসে উঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। তখন বাধ্য হয়ে গোয়াল থেকে বের এল এবং অন্য কোন উপায় বের করার জন্য চিন্তা করতে লাগল।

কৃষক চলে যাওয়ার পর গরু গাধাকে ধন্যবাদ দিল। ধন্যবাদ পেয়ে গাধাও খুশিতে নেচে উঠল। কিন্তু গাধার খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। কিছুক্ষণ পরই কৃষক গোয়াল ঘরে ফিরে এল এবং গরুর বদলে গাধাকেই মাঠে নিয়ে গেল। গাধার কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল বেঁধে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা জমি চাষ করার পর কৃষক কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়ার জন্য একটি গাছের ছায়ায় বসল। এ সময় গাধা মনে মনে ভাবতে লাগল :

গাধা : “গরুকে বাঁচাতে গিয়ে আমি নিজেই বিপদে পড়ে গেলাম! সত্যি সত্যিই আমি একটা গাধা। তা না হলে এমন বোকামি কেউ করে?”

এসব ভাবার পর নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাধা চিন্তা করতে লাগল। হঠাৎ সে গরুকে দেয়া বুদ্ধিটিই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিল। সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী গাধা জমিতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল এবং কান ফাটা চিৎকার দিয়ে আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলল।

চিৎকার শুনে কৃষক গাধার কাছে এল। এরপর তাকে মাটি থেকে উঠানোর চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই উঠাতে পারল না। এরপর কৃষক তার লাঠি দিয়ে গাধাকে বেদম পেটাতে শুরু করল। পেটাতে পেটাতে কৃষক বলল :

কৃষক : “মুর্খ কোথাকার! দেখতেই পাচ্ছিস, গরুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এরপরও সব জেনে শুনে তুই কুড়েমি শুরু করেছিস! তোর দুধ কোনো কাজে আসে না, গোশতেও কোনো ফায়দা নেই। তারপরও ভেবেছিস তোকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াব? আজ যদি কাজ না করিস তাহলে তোকে মেরেই ফেলব।”

গাধা দেখল অবস্থা বিপজ্জনক। তাই সোজা হয়ে দাঁড়াল। প্রথম দিকে বিরক্তির সাথে এবং ধীরে ধীরে মনোযোগ দিয়ে কাজে লেগে গেল। কাজ করার সময় গাধা বিড়বিড় করে বলতে লাগল- যেভাবেই হোক আজ রাতে গরুকে কৌশলে পটাতে হবে যাতে কাল সকালে মাঠে যায়।  যাই হোক, সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ীতে ফিরল গাধা। বাড়ী ফিরেই সোজা গিয়ে ঢুকল গোয়াল ঘরে। গাধাকে দেখেই গরু নড়েচড়ে বসল। এরপর বলল:

গরু: “মাঠ থেকে এলি নাকি? এবার নিশ্চয়ই দেখেছিস, কি কঠিন কাজইনা আমাদের করতে হয়”!

গাধা : “না না, মোটেই কঠিন নয়। আমার তো মনে হয়, খুবই আরামদায়ক এবং সোজা কাজ এটি। কিন্তু অন্য একটি বিষয়ে আমার মনটা ভীষণ খারাপ। তোকে বললে তুইও কষ্ট পাবি।”

গরু : “হাল চাষের চেয়েও কষ্টের কিছু আছে নাকি? ঠিকাছে খুলেই বল্‌, কষ্ট পাবো না।”

গাধা : “ব্যাপারটা তেমন কিছু না। আজ দুপুরে যখন মাঠে কাজ করছিলাম, তখন মালিক তার এক বন্ধুকে বলছিল, আমার গরুটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মনে হয় বাঁচবে না। তাই ঠিক করলাম, কাল যদি ভালো না হয় তাহলে জবাই করে ফেলব।”

এ কথা শুনে গরু ভয়ে কাঁপতে লাগল। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল :

গরু : “তুই সত্যি বলছিস তো! যদি তাই হয় তাহলে কাল থেকেই কাজে লেগে পরতে হবে। মরার চেয়ে কাজ করে খাওয়া অনেক ভালো। তোর মত গাধার বুদ্ধিতে চলতে গিয়েই তো আমার সামনে বিপদ এসে হাজির হয়েছে। আর কোনোদিন আমি তোর কথা শুনব না।”

গাধা: “তোরে বুদ্ধি দিয়ে তো আমিও কম শাস্তি পেলাম না। আমি তোর উপকার করতে গেলাম আর তুই কিনা আমাকে দোষ দিচ্ছিস! গরুর দল বড়ই অকৃতজ্ঞ।”

এভাবে কথা কাটাকাটির মধ্যদিয়ে রাত পোহাল। পরদিন সকালে কৃষক এসে গরুকে ধাক্কা দিতেই সে লাফিয়ে উঠলো। তখন গরু আর গাধাকে নিয়ে সে মাঠের দিকে রওনা হলো। যাওয়ার সময় কৃষক তার ছেলেকে ডেকে বলল :

কৃষক : তুই আরেকটি লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে আয়। গাধাকেও আজ থেকে গরুর পিছু পিছু হাল চাষে কাজে লাগাবি! আর শোন, আরেকটা মোটা লাঠিও নিয়ে আসিস। গাধা আবার ছংবং করতে পারে।

কৃষকের কথা শুনে বেচারা গাধা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। গরুকে বুদ্ধি দেওয়ার কারণেই যে তাকে বিপদের মুখোমুখে হতে হলো- এই ভেবে নিজেকে তিরস্কার করতে লাগল।

(সমাপ্ত)

GolpaKotha
GolpaKothahttps://www.golpakotha.com
Golpo Kotha - Read bengali all time favourite literature free forever in golpakotha.com গল্প কথা - আপনি যদি গল্পপ্রেমী হন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি অবশ্যই আপনার জন্য
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments