ঈশপের ৪টি শিক্ষামূলক গল্প
একতাই বল
এক ছিল চাষি। তার পাঁচজন ছেলে ছিল। ছেলেরা সবসময় ঝগড়া করত। এতে চাষি খুব দুঃখ পেত। চাষি এ ব্যাপারে ছেলেদের অনেক বুঝাত।মাঝেমাঝে অনেক বকাঝকা করত।
এতে কোন পরিবর্তন হলনা। তখন অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেদের কে বলল, তোরা কয় ভাই আছিস সবাই একটি করে কঞ্চি যোগাড় করে আটি বেধে আন আমার কাছে।বাবার কথামতো প্রত্যেক ছেলে একটি করে কঞ্চি যোগাড় করে আটি বেধে আনল।এবার চাষি ছেলেদের বলল,এখন তোমরা আটিটি ভাঙতে চেষ্টা কর।কিন্তু কেও আঁটিটি ভাঙতে পারলনা। চাষি ছেলেদের বলল, এবার আটিটি খুলে ফেল।এবং একটি করে কঞ্চি ভাংগ ।সবাই কঞ্চি পট পট করে ভেংগে ফেলল।
চাষি এবার বলল – দেখলে তো! তোমরা যদি এমন মিলেমিশে এক জোট হয়ে থাক তাহলে কোন শত্রুই তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।আর যদি তোমরা পরস্পর কেবলই ঝগড়া বিবাদ করে আলাদা হয়ে থাক, একের বিপদে অপরে সাহায্য না করো,তাহলে তো বুঝতে পারছো,কেমন করে শত্রু পক্ষ তোমাদের ঘায়েল করে দেবে।
উপদেশ: এক সাথে চলব, সুন্দর সমাজ গড়ব।
বাঘ ও বক
একদা, এক বাঘের গলায় হাড় ফুটেছিল। বাঘ অনেক চেষ্টা করেও হাড় বাহির করতে পারল না; যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে, চারদিকে দৌড়ে বেড়াতে লাগল। সে যে জন্তুকে সামনে দেখে তাকেই বলে, ভাই হে! যদি তুমি আমার গলা হতে, হাড় বের করে দাও, তবে আমি তোমায় পুরস্কার দিব এবং চিরদিনের জন্য তোমার কেনা গোলাম হয়ে থাকব। বাঘকে যে বিশ্বস করা যায় না, এটা কি আর কারও অজনা!
সবার একই কথা- হু, তোমার কথা অনুযায়ি হাড় খুলে দিই আর তুমি আমাকে খাও। বাঘ বলল তোমরা আমার উপকার করবে আর আমি তোমদেরই খাব! এটা কি হয় নাকি! কি যে বলোনা তোমরা। বাঘের মিষ্টি কথায়ও কেউ ভোলে না। কোন জন্তুই রাজী হলো না। অবশেষে, এক বক, পুরস্কারের লোভে। রাজী হলো এবং বাঘের মুখের ভিতর লম্বা ঠোঁট ঢুকিয়ে দিয়ে, অনেক যত্নে হাড়টি বের করে আনল। বাঘটা একটা হাই ছেড়ে বাচলো। সে সুস্থ হলো।
তবে বক পুরস্কারের কথা বলামাত্র, সে দাঁত কড়মড় ও চোখ লাল করে, বলল, আরো বোকা! তুই বাঘের মুখে ঠোঁট ঢুকিয়ে দিয়েছিলি। তোকে যে তখনই আমি খাই নি সেটাই তোর ভাগ্য, আবার পুরস্কার চাস! যদি বাঁচার সাধ থাকে তবে আমার সামনে থেকে যা। নয়তো তোর ঘাড় এখরই মটকে এৰুনি খাবো। বক শুনে, হতবুদ্ধি হয়ে, তারাতারি সেখান থেকে চলে গেল।
উপদেশ: অসতের সাথে ভালো ব্যবহার করালেও, অসত ভালো হয়ে যায় না।
চোর ও মোরগ
কয়েকজন চোর এক বাড়িতে চুরি করতে ঢুকে আর কিছুই পেল না, পেল মাত্র একটি মোরগ। সেটা নিয়ে এসে তারা যখন সেটা জবাই করতে গেল সে তাদের কাকুতি মিনতি করে বললে, আমাকে মেরো না তোমরা, আমি লোকের অনেক উপকার করি । তারা বেশী কাজ করবার সুযোগ পাবে বলে ভোর হবার আগেই আমি ডেকে তাদের জাগিয়ে দেই।
আরে উজবুক, সেই জন্যই ত তোকে খতম করা আমাদের বেশী দরকার। তারা জাগলে যে আমরা চুরি করার সুযোগই পাব না ।
উপদেশ: কোন ভাল কাজ করে পাজী লোকদের হাত থেকে রেহাই পাবার উপায় নেই।
অহংকারের পরিণতি
এক বনের কিনারে ছিল বিরাট একটি গাছ। তার শিকড় যেমন মাটির অনেক গভীরে পৌঁছেছিল তেমনি ডালপালাও চারপাশের অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছড়িয়েছিল। গাছটির ঘন পাতার রাশি সূর্যের আলো প্রতিরোধ করে মানুষকে ছায়া দিত। গাছটিতে অসংখ্য পাখি বাস করত। মানুষ ও পাখির সমাগমে গাছটির চারপাশের এলাকা মুখরিত থাকত।
এই বিরাট গাছের নিচে একটি গাছের চারা গজিয়ে ওঠে। এটি ছিল একটি নমনীয় ও নাজুক হলদি গাছ। সামান্য একটু বাতাসেই তা নুয়ে পড়ত। একদিন দু’ প্রতিবেশী কথা বলছিল। হলদি গাছকে লক্ষ্য বড় গাছটি বলল: ওহে খুদে প্রতিবেশী, তুমি তোমার শিকড়গুলো মাটির আরো গভীরে প্রবেশ করাও না কেন? কেন আমার মত মাথা উঁচু করে দাঁড়াও না?
হলদি গাছ মৃদু হেসে বলল: তার কোনো প্রয়োজন দেখি না। আসলে এ ভাবেই আমি নিরাপদ আছি।
বড় গাছ বলল: নিরাপদ! তুমি কি মনে কর যে তুমি আমার চেয়ে নিরাপদ আছ? তুমি কি জান আমার শিকড় কত গভীরে প্রবেশ করেছে? আমার কাণ্ড কত মোটা ও শক্ত? এমনকি দু’জন লোক মিলেও আমার কাণ্ডের বেড় পাবে না। আমার শিকড় উৎপাটিত করবে ও আমাকে ধরাশায়ী করবে- এমন কে আছে?
গাছটি হলদি গাছের দিক থেকে বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। কার ভাগ্যে কখন কী ঘটে তা কে বলতে পারে?
একদিন সন্ধ্যায় ওই এলাকার ওপর দিয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল। ঘূর্ণিঝড়ে শিকড়সহ গাছ উপড়ে পড়ে, বনের গাছপালা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।
ঝড়ের পর গ্রামবাসী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে বের হল। আকাশচুম্বী গাছগুলোর অবস্থা একেবারে শোচনীয়। সেগুলো হয় উপড়ে পড়েছে অথবা ভেঙে চুরে শেষ হয়ে গেছে। সারা বনের মধ্যে যেন গাছপালার কঙ্কাল ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে শুধু একটি ব্যতিক্রম সবার নজর কাড়ে। তা হলো হলদি গাছ। সেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ঝাপটার শিকার হয়ে এদিক ওদিক হেলে পড়েছে কিংবা মাটিতেও লুটিয়ে পড়েছে। ঝড় শেষ হয়ে যাবার পর সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ও আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার বিরাট প্রতিবেশী গাছটির কোনো চিহ্নও দেখা গেল না।