হাসির গল্প – বোকা ভুত (মজার ভুতের গল্প)
একদিন এক বোকা ভূত শেওড়া গাছের ডালে বসে ছিল। সে উদাসীনভাবে চারপাশ দেখছিল, এমন সময় এক দুষ্টু ছেলে সেই গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ভূত তো ভাবল, এটাই সুযোগ! সে হঠাৎ লাফ দিয়ে ছেলেটার সামনে এসে দাঁড়াল।
ভূত চকচকে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হুঙ্কার দিয়ে বলল, “এখন তোর ঘাড় মটকাব!”
কিন্তু ছেলেটা একটুও ভয় পেল না। সে ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বলল, “তুই আমার ঘাড় মটকাবি? জানিস আমি কে?”
বোকা ভূত একটু অবাক হয়ে বলল, “কে তুই?”
দুষ্টু ছেলেটা গম্ভীর গলায় উত্তর দিল, “আমি ভূতের বাপ টুত!”
ভূত ভ্রু কুঁচকে বলল, “তাই নাকি? তুই টুত! কিন্তু তোর কী আছে যে তুই আমাকে ভয় দেখাস?”
ছেলেটা হাসতে হাসতে বলল, “কারণ আমি যা খেতে পারি, তা তুই খেতে পারবি না।”
ভূত অবাক হয়ে বলল, “তাই নাকি? দেখা তো!”
ছেলেটা তখন তার পোটলা খুলে দুইটি ক্ষুদ্র মাটির পাতিল বের করল। একটাতে ছিল সুস্বাদু দই, আর অন্যটাতে ছিল ধবধবে সাদা চুন। সে দইয়ের পাতিল থেকে এক চামচ তুলে খেল এবং ভূতের দিকে তাকিয়ে বলল, “এবার তুই খা, দেখি পারিস কিনা।”
বোকা ভূত তো আর এসব বোঝে না! সে না বুঝেই চুনের পাতিল থেকে এক চামচ তুলে মুখে দিল। চুন জিভে লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ভূতের চোখ কপালে উঠল! জ্বালায় ছটফট করতে করতে চিৎকার করে উঠল, “ওরে বাবা গো! ওরে মা গো! বাঁচাও!” সে হাত থেকে পাতিল ফেলে দিল এবং ছেলেটার পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগল।
দুষ্টু ছেলেটা তখন জোরে অট্টহাসি দিয়ে বলল, “হীরা-জহরত যা আছে, তাড়াতাড়ি বের কর!”
ভূত তখন আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে ভাবল, এই ছেলেটা তো সাধারণ কেউ না! নিশ্চয়ই খুবই শক্তিশালী। তাই সে সঙ্গে সঙ্গে তার গুপ্তধনের সন্ধান দিল।
ভূতের কথায় ছেলেটা আরও উৎসাহ পেল। সে বলল, “তুই যদি সত্যি ভূত হোস, তাহলে তো তোকে অনেক কিছু জানা উচিত। বল তো, কোথায় কোথায় গুপ্তধন আছে?”
ভূত কাঁদো কাঁদো মুখে বলল, “গাছের গোড়ায়, মাটির নিচে অনেক সোনাদানা পুঁতে রাখা আছে। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা করো, আমি সব তোমাকে দিয়ে দেব।”
ছেলেটা মনে মনে হাসল, কিন্তু বাইরে তা বুঝতে দিল না। সে গম্ভীর মুখে বলল, “ঠিক আছে, তবে আমাকে সব দেখাতে হবে। যদি কোনো চালাকি করিস, তাহলে আবার চুন খাওয়াব!”
ভূত ভয়ে তড়িঘড়ি করে গাছের গোড়ার দিকে গেল। সে ছেলেটাকে দেখিয়ে দিল এক পুরনো সিন্দুক। ছেলেটা বলল, “এটা খুলে দে!”
ভূত সিন্দুক খুলতেই ছেলেটার চোখ চকচক করে উঠল। সিন্দুকের ভেতর ঝলমলে সোনা, রত্ন আর রুপোর মোহর ভরা ছিল! ছেলেটা ভাবল, সে বুদ্ধি করে এক বোকা ভূতকে বোকা বানিয়ে দিল!
তবে ছেলেটা শুধু লোভী ছিল না, সে ছিল বুদ্ধিমানও। সে ভূতের দিকে তাকিয়ে বলল, “শুধু এইটুকু কেন? আরও কোথায় কোথায় গুপ্তধন আছে, সব বল!”
ভূত তখন আরও ভয়ে কুঁকড়ে গেল। সে বলল, “আমার জানা মতে, নদীর ধারে এক পুরনো গুহায় অনেক ধন-সম্পদ রাখা আছে। সেখানে একদল ভূত পাহারা দেয়।”
ছেলেটার কৌতূহল বেড়ে গেল। সে বলল, “তাহলে চল, আমায় সেখানে নিয়ে যা!”
ভূত মনে মনে ভাবল, এবার বুঝি রক্ষা নেই। কিন্তু উপায় নেই, ছেলেটার কথা মানতেই হবে। সে ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে নদীর ধারের সেই গুহার দিকে রওনা দিল।
গুহার সামনে পৌঁছাতেই ছেলেটা দেখল, সেখানে বেশ কটি ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভূতেরা একে অপরের সঙ্গে গল্প করছে, হাসাহাসি করছে। তারা সবাই বেশ খুশি মনে আছে।
ছেলেটা ভূতের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, “তুই যদি আমাকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করিস, তাহলে মনে রাখ, চুন তো এখনো আমার কাছে আছে!”
ভূত ভয়ে তাড়াতাড়ি বলল, “না না, আমি কোনো চালাকি করব না! তুমি শুধু একটু অপেক্ষা করো, আমি আমার সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলে দেখি কী করা যায়।”
ভূত এগিয়ে গেল এবং তার বন্ধুদের কাছে সব খুলে বলল। অন্য ভূতেরা প্রথমে বেশ রেগে গেল, কিন্তু যখন শুনল যে ছেলেটা ভূতের বাপ বলে দাবি করছে, তখন তারা সবাই একটু চিন্তায় পড়ে গেল। তারা ভাবতে লাগল, যদি সত্যিই সে ভূতের বাপ হয়, তাহলে তো বিপদ!
এক বৃদ্ধ ভূত বলল, “আচ্ছা, আমরা একটা পরীক্ষা নিয়ে দেখি, সে সত্যিই ভূতের বাপ কি না।”
তারা ছেলেটাকে সামনে ডেকে আনল। এক ভূত বলল, “তুই যদি সত্যিই ভূতের বাপ হোস, তাহলে প্রমাণ দে!”
ছেলেটা ভাবল, এই ভূতগুলোকে বোকা বানাতে হলে আরও কিছু চালাকির দরকার। সে বলল, “আমার পরীক্ষা দিতে লাগবে না, কারণ আমি যা খেতে পারি, তোমরা তা খেতে পারবে না!”
বৃদ্ধ ভূত বলল, “তা তো আমরা দেখেছি, কিন্তু আরও কিছু চাই।”
ছেলেটা তখন বলল, “আমি চাই তোমরা আমাকে সেই গুপ্তধন দেখাও, তারপর আমি আরও পরীক্ষা দেব।”
ভূতেরা ভাবল, এই ছেলেকে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। তাই তারা সবাই মিলে তাকে গুহার ভেতর নিয়ে গেল। সেখানে এক বিশাল সিন্দুক রাখা ছিল, যার ভেতর আরও বেশি ধনসম্পদ ছিল।
ছেলেটা হাসল এবং বলল, “এই ধনসম্পদ এখন আমার! তোমরা কেউ বাধা দিলে আবার চুন খেতে হবে!”
ভূতেরা আর দেরি করল না। তারা সবাই চম্পট দিল, আর দুষ্টু ছেলেটা বিশাল ধনসম্পদ নিয়ে ফিরে গেল নিজের গ্রামে। সেখান থেকে সে হয়ে উঠল এক ধনী মানুষ, আর বোকা ভূতগুলো রইল নিজেদের বোকামির জন্য অনুশোচনা করতে!
(সমাপ্ত)